পবিত্র কুরআনের বর্ণনায় আলোকিত পরিবার-২

Daily Inqilab মাওলানা শিব্বীর আহমদ

২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম | আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১২:০৬ এএম

একজন নেককার পুরুষের জন্য নেককার স্ত্রীর মতোই অসামান্য এক নিআমত, নেককার সন্তান। নিজের ঔরসজাত কিংবা গর্ভজাত বলে সন্তানের প্রতি ভালোবাসা মানুষ পোষণ করে, বিষয়টি এখানেই শেষ নয়। সন্তান ছাড়া সংসারে পূর্ণতা আসে না। শুধু সাংসারিক পূর্ণতাই নয়, নিজের জীবনও যেন অপূর্ণ থেকে যায়। অপূর্ণতার এ অনুভবে নারী-পুরুষে কোনো ফারাক নেই। নিঃসন্তান দম্পতি যারা, তারা আন্দায করতে পারবেন নিআমত হিসেবে সন্তান যে কতটা অসামান্য!

পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এমনই এক নিঃসন্তান দম্পতির আকুতির বিবরণ দিয়েছেন। ঘটনাটি আমাদের নবী হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালামের। নিঃসন্তান অবস্থাতেই কেটে গিয়েছিল তাঁর যৌবনের দিনগুলো। তাঁর জীবনে এসে হানা দেয় বার্ধক্য। মাথার কালো চুলগুলো সাদা হয়ে যায়। বার্ধক্যের আঘাতে শরীর হয়ে পড়ে দুর্বল। বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়েও সন্তানের আকাক্সক্ষা উপেক্ষা করতে পারেননি। আকুতিভরে আল্লাহ তাআলার দরবারে ফরিয়াদ করেছেন একজন সন্তানের জন্যে।

পবিত্র কুরআনের বিবরণ পড়ুন : (এটি) স্বীয় বান্দা যাকারিয়ার প্রতি তোমার প্রতিপালকের রহমতের বিবরণ, যখন সে স্বীয় প্রতিপালককে মৃদুস্বরে ডাকল। সে বলল, হে আমার প্রতিপালক! আমার হাড়গুলো দুর্বল হয়ে গেছে, চুলগুলো সাদা হয়ে গেছে; কিন্তু হে আমার প্রতিপালক! আপনার নিকট প্রার্থনা করে আমি কখনো বিফল হইনি। আমি আমার পরে আমার ভাই-বেরাদরের ব্যাপারে ভয় করি, অথচ আমার স্ত্রী বন্ধ্যা। তবুও আপনি আমাকে আপনার পক্ষ থেকে একজন উত্তরাধিকারী দান করুন, যে আমারও উত্তরাধিকারী হবে এবং ইয়াকুবের বংশধরের উত্তরাধিকারও লাভ করবে। হে প্রতিপালক! তাকে এমন বানান, যে আপনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত হবে। (আল্লাহ বললেন,) হে যাকারিয়া! আমি তোমাকে এক পুত্রের সুসংবাদ দিচ্ছি, যার নাম হবে ইয়াহইয়া। আমি আগে এ নামে আর কাউকে সৃষ্টি করিনি। (সূরা মারইয়াম : ২-৭)।

এই হলো সন্তান। এ সন্তানের জন্য একজন নবী বার্ধক্যে উপনীত হয়েও আল্লাহর দরবারে দুআ করতে পারেন। তবে সবিশেষ লক্ষ্যণীয়, হযরত যাকারিয়া আলাইহিস সালাম দুআ করেছেন এভাবেÑ আমাকে এমন এক সন্তান দান করুন, যে হবে আপনার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত। সহজ ভাষায় আমরা বলতে পারি নেককার। তাঁর এ প্রার্থনা সূরা আলে ইমরানে বর্ণিত হয়েছে এভাবে : হে আমার প্রতিপালক! আপনি আপনার পক্ষ থেকে আমাকে এক নেককার সন্তান দান করুন। (সূরা আলে ইমরান : ৩৮)।

শুরুতে সূরা ফুরকানে বর্ণিত আল্লাহ তাআলার খাস বান্দাদের যে দুআর কথা বলা হয়েছে, সেখানে এমন নেককার সন্তান আর নেককার জীবনসঙ্গীই প্রার্থনা করা হয়। সন্তান ও জীবনসঙ্গী যদি নেককার না হয়, আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টিপ্রাপ্ত না হয়, তাহলে সুখের শত উপকরণে ডুবে থেকেও জীবন হয়ে পড়ে বিভীষিকাময়। কুরআনের ভাষায় যাকে বলা হয়েছে, ‘ফিতনা’।

সূরা তাগাবুনের আয়াত : নিশ্চয়ই তোমাদের ধনসম্পদ ও তোমাদের সন্তানসন্ততি ফিতনাস্বরূপ। (সূরা তাগাবুন : ১৫)। ফিতনা মানে পরীক্ষা। সন্তান যদি নেককার হয়, তবে তো তা এক মহা নিআমত। তা এমন এক নিআমত, যার ফল মানুষ দুনিয়াতেও ভোগ করে, ভোগ করে মৃত্যু-পরবর্তী কবরের জীবনেও।

মৃত মা-বাবার জন্য জীবিত সন্তানের যে আকুতিভরা দুআ তা কি দুনিয়ার কোনো ভাষায় সংজ্ঞায়িত করা যায়! কিন্তু যদি- আল্লাহ না করুন- সে এমন না হয়, দুশ্চরিত্রের অধিকারী হয়, তবে যে সে সন্তান কেবল নিজের জীবন বরবাদ করবে, কিংবা বাবা-মা তার দুআ থেকে বঞ্চিত হবে এমন নয়; বরং এ সন্তানের কারণে বাবা-মায়ের দ্বীনদারীও আক্রান্ত হতে পারে। তখন পরকাল বরবাদ হবে সকলের সন্তানের এবং বাবা ও মায়ের; এমনকি দুনিয়ার স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনও জাহান্নাম হয়ে পড়তে পারে। মন্দ সন্তান বাবা-মাকেও মন্দ কাজে বাধ্য করতে পারে। অন্যায় মন্দ আবদার দিয়ে বাবা-মাকে তাদের অনুসৃত সরল পথ থেকে সরিয়ে দিতে পারে।

সন্তানের কাছে বাবা-মা এতটাই অসহায় হয়ে পড়েন, সারা জীবনের মেনে চলা রীতি-নীতিও তারা বিসর্জন দিতে বাধ্য হন ওই দুশ্চরিত্র সন্তানের কারণে।

মোটকথা, পরিবার আমাদের জীবনে এক স্বাভাবিক বাস্তবতা। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আপদে-বিপদে পরিবারের কাছেই আমরা আশ্রয় খুঁজে পাই। শত কষ্টের উপশম খুঁজে পাই। পরিবারের সদস্যরা, জীবনসঙ্গী কিংবা সঙ্গিনী এবং সন্তানাদি যদি দ্বীনদার হয়, নেককার হয়, তাহলে সে পরিবার আলোকিত পরিবার। দুনিয়ার এ ক্ষণস্থায়ী আবাসস্থলটাও এক টুকরা বেহেশত মনে হতে পারে। পার্থিব কোনো কষ্টই সেখানে মুখ্য নয়। কিন্তু যদি উল্টো হয়, তাহলে এর ফলও বিপরীতই হবে। এটাই স্বাভাবিকতা। পবিত্র কুরআনে তাই আমাদের এ চিরন্তন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, আমরা যেন নিজেরাও জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার চেষ্টা করি, আমাদের পরিবার-পরিজনকেও যেন বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করি।

পড়ুন : হে ঈমানদারেরা! তোমরা তোমাদের নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত থাকবে কঠোরহৃদয় ফেরেশতারা, তারা আল্লাহর আদেশ লঙ্ঘন করে না এবং তিনি তাদের যা আদেশ করেন, তারা তা-ই করে। (সূরা তাহরীম : ৬)। আলোকিত পরিবার গড়ার জন্য এর বিকল্প নেই।


বিভাগ : শান্তি ও সমৃদ্ধির পথ ইসলাম


মন্তব্য করুন

HTML Comment Box is loading comments...

আরও পড়ুন

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

৫ দিনের ছুটির কবলে বেনাপোল স্থলবন্দর

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

গোদাগাড়ীতে কৃষি মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানালেন নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সোহেল

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সন্ত্রাসী তৎপরতার তথ্য পেলেই অভিযান : র‌্যাব পরিচালক

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

যুক্তরাষ্ট্রে পৌঁছেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

ফ্রান্সে ইহুদি উপাসনালয়ে আগুন, অভিযুক্তকে গুলি করে হত্যা

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

নৌযান চলাচল বন্ধ থাকবে দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা নির্বাচনে

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

বেলজিয়াম-নেদারল্যান্ডস-জার্মানিকে হারিয়ে বিশ্বকাপের আয়োজক ব্রাজিল

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

নদী ভাঙন আতঙ্কে নির্ঘূম রাত কাটে উপকূলবাসীর

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

দিঘিতে মিলল এক মণ ওজনের কোরাল, বিক্রি ৪০ হাজারে

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

সুধা রানীর হাদিসের প্রভাষক পদে উত্তীর্ণ হওয়া নিয়ে তোলপাড়, যে ব্যাখ্যা এনটিআরসির

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

গাজায় ইসরায়েলের অভিযান বন্ধে আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশ চেয়েছে দ. আফ্রিকা

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

১০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠাবে যুক্তরাজ্য

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

দৌলতপুরে পদ্মায় নিখোঁজ কিশোরের লাশ উদ্ধার

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

কলকাতায় ফের করোনা আতঙ্ক, এক সপ্তাহে আক্রান্ত ৫

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

মুখোমুখি বিতর্কে রাজি বাইডেন ও ট্রাম্প, কবে হবে জোড়া বাকযুদ্ধ?

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

তিন দশকের মধ্যে গড় আয়ু পাঁচ বছর বাড়বে

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

জার্মানিতে বিস্ফোরণের পরে বাড়িতে আগুন, নিহত তিন

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

ইসরাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যা মামলার শুনানি শুরু

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন

শেখ হাসিনাকে ফুল দিয়ে অভিনন্দন